নিকলীতে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ধানি জমির ফসল
সানি সূত্রধর,কিশোরগঞ্জ থেকেঃ
উজান থেকে নেমে আসা পানি ও পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়নের বড় বাঁধ ভেঙে প্রায় ৮০০ একর জমির পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে। এতে এলাকার কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গতকাল ভোরে হঠাৎ সিংপুর বড় বাঁধ ভেঙে গিয়ে হাওরের জমির পাকা ধান তলিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক দিনমজুরকে ৭০০ টাকা দিয়েও জমিতে পানি থাকায় ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সিংপুর ইউনিয়নের বড় বাঁধ ঘুরে দেখা যায়, বাঁধ ভেঙে হাওরের জমির ধান প্রায় এক ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। ওই জায়গায় যে বোরো ধানের জমি ছিল, প্রথমে দেখলে বোঝা যাবে না। সিংপুর গ্রামের আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘সারা বছর পরিশ্রম করে পাঁচ একর জমিতে ব্রি ২৯ জাতের ধানের চাষ করেছি। আর দুই দিন পরেই ধান কেটে বাড়িতে আনার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এখন চোখের সামনে সব পাকা ধানের জমি তলিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের দিয়ে ডুবে থাকা পাকা ধান কাটার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ডুব দিয়ে এ ধান কাটা সম্ভব না।’
একই কথা কলেন কৃষক আবদুল হেকিম, আনোয়ার ইসলাম, আরস আলী, আনিস মিয়া, শামসু উদ্দিন, সাহের উদ্দিন ও সুনামউদ্দিন মাস্টার। সিংপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই বাঁধের আওতায় সিংপুর হাওরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। টানা কয়েক দিনে প্রায় ৯০০ একর জমির ধান কাটা হয়েছে। ৮০০ একরের ধান বড় বাঁধটি ভেঙে তলিয়ে গেছে। জমিতে এখনো প্রায় এক ফুট পানি আছে।
সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ ঘোড়উত্রা নদীর পানি বাড়ায় বাঁধটি ভেঙে গেছে।
নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে গতকাল সিংপুর বড় বাঁধের ভাঙনটি দেখে এসেছি। এ মুহূর্তে কিছু করার নেই। কৃষকেরা পানিতে নেমে কিছু পাকা ও আধা পাকা ধান কাটছে। তবে ওই বাঁধ আগামী বোরো মৌসুমের আগেই মাটি ফেলে উঁচু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হবে।’
এদিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গতকাল সোমবার নতুন করে ১৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে দিন কাটাচ্ছে হাজারো মানুষ। উপজেলার জাফলংয়ের পিয়াইন নদী ও বিছানাকান্দিতে পানি বেড়ে গেছে। এতে দুটি কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সকালে নতুন করে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সারি-গোয়াইনঘাট ও গোয়াইনঘাট-জাফলং সড়কের অধিকাংশ তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে বিছানাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারির কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। তবে গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর থেকে পানি কিছুটা নামতে শুরু করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আকস্মিক বন্যায় উপজেলার ৩ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। তবে বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতে পারে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, উপজেলার রুস্তমপুর, পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, লেঙ্গুরা, আলীরগাঁও, তোয়াকুল, নন্দীরগাঁও, ফতেপুর, ডৌবাড়ি, বিছানাকান্দিসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের বাড়িঘর ও উঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। হাওর এলাকায় ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় জাফলং ও বিছানাকান্দি পাথর কোয়ারিতেও কাজ বন্ধ রয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/জেডআর